ব্যাগ-রাজনীতি
এতদিন দলীয় রাজনীতির আঙিনায় দেখেছিল দেশ। এবার দেখলো সংসদীয় রাজনীতির আঙিনায়। তিনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা। প্রিয়দর্শীনি ইন্দিরা গান্ধির নাতনি। কংগ্রেসের যখন অত্যন্ত ডামাডোল অবস্থা সেই সময় দলের প্রবীণ নেতাদের অনুরোধে মা সনিয়া গান্ধির অনুমতিক্রমে প্রথম অভিষেক হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার। আর অভিষেকেই দলের নবীন প্রজন্মের হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন রাজীব তনয়া। টাইলের দিক থেকে অবিকল ইন্দিরা গান্ধি। দলের নবীন-প্রবীন সব প্রজন্মের কাছেই তিনি সমানভাবে প্রহণযোগ্য। বহু অনুরোধের পর অবশেষে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন প্রিয়াঙ্কা। দাদা ছেড়ে আসা কেরলের ওয়েনাড আসন থেকে রেকর্ড ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন তিনি। আর সংসদেও প্রথম দিনেই চমক দিলেন। প্রতি পদক্ষেপেই যেন তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন তিনি ইন্দিরা গান্ধির নাতনি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এমন সময় সংসদে পা রেখেছেন যখন দেশ এবং বিদেশে ঘটনাপ্রবাহ চলছে। একদিকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের বর্বর এবং সীমাহীন অত্যাচার গোটা ফিলিস্তিনকে কার্যত গণকবরে পরিণত করেছে। আর সেটা নিয়ে নীবর সারা বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে ভারতও ইসরাইলের পক্ষ অবলম্বন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে গান্ধি পরিবারের সদস্য হয়ে কিভাবে মুখ বুজে থাকবেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি প্রথম দিনেই সংসদের অধিবেশনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তিনি এবং তাঁর দল জাতীয় কংগ্রেস যে ফিলিস্তিনদের পক্ষে তা বড় বড় হরফে 'প্যালেস্টাইন' লেখা একটি ব্যাগে নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর সেই ছবি নজর কেড়েছে সকলের। আর তার ছিল নিচেই আঁকা রয়েছে তরমুজ। যা প্যালেস্তিনীয়দের সংহতির প্রতীক। প্রিয়াঙ্কার এই 'ব্যাগ রাজনীতি'র বিজেপি অনেকটাই ব্যাকফুটে। সেই কারণেই সংসদে যেমন বিজেপিকে পাল্টা সরব হতে দেখা গিয়েছে, তেমনি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সরব হয়েছেন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, 'আমরা সাড়ে ৫ হাজারের উপর যুবককে ইসরাইলে পাঠিয়েছি। অথচ একজন কংগ্রেস নেত্রী 'প্যালেস্টাইন' লেখা ব্যাগ নিয়ে পার্লামেন্টে ঘুরছেন। এপ্রসঙ্গে বলতেই হয়, আত্মনির্ভর ভারত থেকে তাও আবার ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ থেকে এক লক্ষ ছেলেকে ইসরাইলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার সরকার। এই ছেলেরা সেখানে গিয়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করবেন। গত বছরের নভেম্বরে ১ লক্ষ ভারতীয় শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল ইসরাইল। এবছরের এপ্রিল ও মে মাসে ইহুদিবাদী এই দেশটিতে কাজ করতে গিয়েছেন ছয় হাজারের উপর ভারতীয়। সংসদে 'প্যালেস্টাইন' লেখা ব্যাগ নিয়ে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা একঢিলে দুটি পাখি মারলেন।
তবে ব্যাগ রাজনীতির আর এক খেল দেখালেন প্রিয়াঙ্কা। যেদিন তিনি 'প্যালেস্টাইন' লেখা ব্যাগ নিয়ে সংসদে প্রবেশ করলেন তার একদিন পরই আর একটি ব্যাগ নিয়ে যান। যাতে লেখা 'বাংলাদেশের হিন্দু-খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়াও।' বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের হয়ে আওয়াজ তুলতেই যে তিনি ব্যাগ নিয়ে এসেছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ভারতের সংখ্যালঘুদের পেষণে যাঁরা সিদ্ধহস্ত, তাঁরাই আবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনে কুরীরের কান্না কাঁদছেন। আর কংগ্রেস সারা দেশজুড়ে, সারা বিশ্বজুড়ে যেখানেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে তারহ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু হিন্দু নয়, সংখ্যালঘু মুসলমান, সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সকলের প্রতি সহমর্মী কংগ্রেস। সারা বিশ্বজুড়ে সংখ্যালঘুদের ন্যায়বিচারের জন্য কংগ্রেস যে সোচ্চার তা 'ব্যাগ রাজনীতি' করে ফের একবার প্রমাণ করেদিলেন ইন্দিরা গান্ধির উত্তরসূরি প্রিয়াঙ্কা।