মসজিদ আল্লাহর ঘর
মসজিদ হল আল্লাহর ঘর। সেই ঘর বাবর বানিয়েছেন নাকি আকবর তাতে কিছু এসে যায় না। মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার সময় যিনি মসজিদ বানিয়েছেন তাঁকে উদ্দেশ্য করে নামাযিরা মাথা নত করেন না। মাথা নত করেন আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে। মসজিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সেজদা করার স্থান। মসজিদ হল সেই ঘর, যে ঘরকে মুসলিমদের সালাত বা নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্র হওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এককথায় মসজিদের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ। (যদিও তিনি সবকিছুরই মালিক)। হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য সবচাইতে পছন্দনীয় স্থান হল মসজিদ এবং সবচাইতে অপছন্দের স্থান হল বাজার। দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হল কাবা শরীফ। আল্লাহ তাআলা এই কাবাকে 'তাঁর ঘর' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মসজিদের প্রতি গুরুত্ব এবং সম্মান বোঝাতে এই স্থানকে 'আল্লাহর ঘর' বলা হয়েছে। কেননা মসজিদ নির্মাণ করার উদ্দেশ্য হল, এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের জ্ঞান শিক্ষা এবং একমাত্র তাঁকেই সেজদা করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং মসজিদ সমূহ যেহেতু পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর সেহেতু আল্লাহর ঘর সমূহের সম্মান রক্ষা করা, তা হেফাজত করা এবং তার হক আদায় করা প্রত্যেক মুসলমান অপরিহার্য কর্তব্য বলে মনে করেন। এই কারণেই প্রত্যেক মুসলমানের কাছে সব মসজিদের মর্যাদাই সমান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি আবেগ তো থাকেই। যেমন আজও আছে বাবরি মসজিদের ক্ষেত্রে। সেই কারণেই বাবরি মসজিদ শহিদ করার ৩২ বছর পরও মুসলিমদের মধ্যে একই রকম আবেগ রয়ে গেছে। আজ বাবরি মসজিদ নেই ঠিকই, কিন্তু আবেগে এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং বাবরি মসজিদ শহিদ করার পর এই মসজিদ সম্পর্কে মুসলমানদের আবেগ আরও বেড়ে গেছে। মুঘল সম্রাট বাবর মসজিদটি বানিয়ে ছিলেন বলেই সেই মসজিদের নাম বাবরি মসজিদ। তাছাড়া সারা দেশে তো বিভিন্ন নামের বহু মসজিদ রয়েছে। মসজিদের নামে কিছু এসে যায় না। মসজিদ মানেই আল্লাহর ঘর, এটাই শেষ কথা মুসলমানদের কাছে। কিন্তু সেই আবেগকে আঘাত করাই দস্তুর হয়ে উঠেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কাছে। বাবরি মসজিদ নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বহু বছর ধরে বিতর্ক তৈরি করেছেন। তাঁদের মূল টার্গেট ছিল এই মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির তৈরি করা। শেষমেশ হলও তাই। তবে সেই সময় মনে করা হয়েছিল বোধ হয় শুধু অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে রাম মন্দির তৈরি করেই খ্যান্ত হবেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। কিন্তু না। বাবরি মসজিদ ভাঙা ছিল সূচনামাত্র। তারপর থেকেই একে একে শুরু হল জ্ঞানবাপী, মথুরার শাহী মসজিদ, সম্বলের মসজিদ, আজমীর শরিফে গরিবে নওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি রহ. এর মাজার নিয়ে টানাটানি। সব মসজিদ, মাজারের ভিতের ভিতর তাঁরা মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মন্দিরের অস্তিত্ব! আর সেই কাজে পরিকল্পনা করে নামানো হচ্ছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে। রোটি, কাপড়া, মাকান এর দাবি ভুলে সরকার এখন ধর্ম ব্যবসায় নেমেছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির বলেছেন, তিনি মুর্শিদাবাদে একটি বাবরি মসজিদ তৈরি করবেন। এতেই কেন গোঁসা হবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের? তাঁরা তো রে রে করে উঠেছেন। হুমায়ুনের পিতা বাবর কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। আসলে এদের মধ্যে ইসলামোফোবিয়া গ্রাস করেছেন।
লিংক ভিডিও https://www.facebook.com/share/v/WYeBYCtG7SYwUv6J/