কিভাবে ভালো থাকবে?

 


কিভাবে ভালো থাকবে?

বিধানচন্দ্র হালদার 

         


   কিভাবে ভালো থাকবে ? কিভাবে ভালো থাকা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর বেশির ভাগ মানুষের কাছে অজানা। তাই আমরা বেশির ভাগ সময়ে ভালো থাকি না। অথচ একটু চেষ্টা করলেই খুবই ভালো ভাবে থাকা যায়। সুখে থাকা যায়। এই কৌশলটা অনেকের কাছে অজ্ঞাত, অজানা। আসুন সবাই মিলে প্রথমে হিসাব কষে দেখি--এক ঘন্টা মানে ৩৬০০ সেকেন্ড, ২৪ ঘন্টায় একদিন। তাহলে ২৪×৩৬০০=৮৬৪০০ সেকেন্ড। ঠিক হিসাব করলাম তো? পাশ থেকে রতন বলে উঠলো-হ্যাঁ। আমি রতনকে জিজ্ঞাসা করলাম--তাহলে ২০ সেকেন্ডের জন্য কেউ আমাকে কটু কথা বা খারাপ কথা বললে বা খারাপ আচরণ আমার সাথে করলে আমার হাতে তখন পড়ে আছে ৮৬৩৮০ সেকেন্ড। এই ২০ সেকেন্ডের নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে বাকি ৮৬৩৮০ সেকেন্ডকে আমরা অবহেলা করি। বাকি সময়টা যদি আমরা ইতিবাচক চিন্তা করতাম তাহলে অনায়াসে ভালো থাকতে পারতাম। কিন্তু এর উল্টোটাই আমরা করি। আমরা সেই ২০ সেকেন্ডের চিন্তা করতে করতে বাকি সময়টা নষ্ট করে ফেলি। তাই আমার মনে হয় ২০ সেকেন্ডের বিরক্তিকর পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে সারাদিনটা ভালো থাকা যায়। নইলে এই ২০ সেকেন্ডের কথা সারাদিন ভাবতে থাকলে আমাদের জীবনটা অচল পয়সা হয়ে যাবে। 


       সংসারে কথা কাটাকাটি হবে ক্ষণিকের জন্য, এটাই স্বাভাবিক।তা বলে সারাটা জীবন তার রেস যদি আমাদের মনের মধ্যে ধরে রাখি তাহলে জীবনটা বেঁচে থেকেও মৃত। অফিস, আদালত ,কর্মক্ষেত্র ,রাস্তাঘাট সর্বত্র কোনো না কোনো জায়গা থেকে আমরা আঘাত পেয়ে থাকি সাময়িক ভাবে। তা বলে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত যদি সেই খারাপ লাগা বা নেগেটিভ চিন্তা করি তাহলে অসময়ে আমাদের প্রেসার ও সুগারের ওষুধ খেতেই হবে। গীতার সেই বাণী মাথায় রেখে চললেই আনন্দে বা ভালো থাকা যায়--"যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে, যা হবে ভালোই হবে"। এটা মূলত একটি ইতিবাচক চিন্তা। আর এই ইতিবাচক চিন্তা যখন আমাদের মাথার মধ্যে আসে আর তখনই আমরা ভালো থাকি।। 


       পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ বা মহাপুরুষ নেই যে দুঃখ পায় নি। বেঁচে থাকা মানেই দুঃখ। অসংখ্য দুঃখের যোগফল সুখ। তাই দুঃখ সারা জীবন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখ ভুলে ইতিবাচক চিন্তায় মগ্ন থেকে আনন্দে থাকা এটাই অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক চিন্তা, ভাবনায় যে মগ্ন থাকবে সেই আনন্দে থাকবে। নইলে জীবিত থেকেও মৃত অবস্থায় আমাদের দিন  কাটাতে হয়। চোর ১০০ টাকা চুরি করেছে, আমার ১০০ টাকা। তাকে ধাওয়া করতে গিয়ে আমার বাকি লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি করছি না তো? একটি মুরগির ডিম বা ঘোড়ার ডিম নিয়ে অযথা তর্কাতর্কি করে আমার বাকি জীবনটা অচল করে দিচ্ছি না তো? একটি প্রদীপ নিভে গেছে বলে বাকি প্রদীপ জ্বালাতে ভুলে যাচ্ছি না তো? 


    জীবনের সাময়িক খারাপ পরিস্থিতি থেকে কুইক বেরিয়ে এসে ইতিবাচক চিন্তা করতে পারলেই সব সময় আনন্দে থাকা যায়। কিভাবে ভালো থাকা যায়? তোমার হাতেই চাবিকাঠি। দুঃখের পিছনে ছুটলে দুঃখ বেড়ে যাবে। আনন্দের পিছনে ছুটলে বা ভালোর পিছনে ছুটলে আনন্দ বেড়ে যাবে। এ কৌশল তোমাকে অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না। তোমার পরম আত্মা তোমাকে ঠিক করে দেবে। তুমি ভালো থাকতে চাইলে ভালো ,মন্দ থাকতে চাইলে মন্দ। 



১২/১২/২০২৪


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url