আইনে আটকে ন্যায়বিচার
আরজি কর মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা। আরজি করের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন হওয়ার পর এই ঘটনার
নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সিবিআই চেয়ে মামলা করেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। সেই মতো কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে দিয়ে আরজি কর ঘটনার তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই কারণেই যে, তাঁদের মেয়ে আর কোনও দিন ফিরে আসবে না। তবে তাঁর খুনি কে সেটা সিবিআইয়ের নিরপেক্ষ তদন্তে উঠে আসবে। আর সেই সঙ্গে এই জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। কারণ সেই সময় তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এই মামলার তদন্ত যদি রাজ্য পুলিশ করে তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না। একমাত্র সিবিআই দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে। এই ধারণা অমূলক নয়। কারণ সিবিআই দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা। তাদের নেটওয়ার্ক এবং তদন্ত প্রক্রিয়া নিখুঁত। অন্তত এমন ধারণাই রয়েছে জনমানসে। কিন্তু সেই ধারণা যে ভুল তা এখন অন্তত টের পেয়েছেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তাই সিবিআই নিয়ে খেদ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁদের। নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছেন, আদালতে দাঁড়িয়ে সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থা মিথ্যা কথা বলবে এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। সিবিআই নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় সংবাদ মাধ্যমের সামনে। তবে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা ছাড়তে নারাজ তিনি। তবে নির্যাতিতার বাবা-মা মুখে যতই বলুন না কেন দীর্ঘস্থায়ী লড়াই সংক্রাম চালিয়ে যাওয়ার কথা, বাস্তবে রাজ্যে ঘটে যাওয়ার আরও দুটি ঘটনার তদন্তপ্রক্রিয়া দেখার পর কিছুটা হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক তাঁদের ক্ষেত্রে। ধর্ষণ-খুনের তদন্ত রাজ্য পুলিশ যেখানে ৬০ দিনে শেষ করে দিয়ে নজির গড়ছে, সেখানে ১২০ দিন কেটে যাওয়ার পরও তার কিনারাই করতে পারেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই! ইতিমধ্যে জয়নগরে নাবালিকা ধর্ষণ-খুন এবং ফারাক্কায় নাবালিকা ধর্ষণ-খুন এর তদন্তে নেমে রাজ্য গোয়েন্দারা ৬০ দিনেই কিনারা করতে সক্ষম, সেখানে কেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ১২০ দিনেও তদন্ত এককদম এগোল না? ইতিমধ্যে চার মাসে ২ বার আইনজীবী বদল হয়েছে আরজি কর মামলার। আগেই এই মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এবার মামলাটি ছাড়লেন বিনা পয়সায় লড়তে চাওয়া আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারও। সিনিয়র চিকিৎসকদের কেউ
কেউ মনে করেন, অসঙ্গতি রয়েছে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের কাজে। এর জেরে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেন বারবার আইনজীবী বদল হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার? কেন এই মামলা থেকে আইনজীবীরা সরে দাঁড়াচ্ছেন? বিচারের দায়িত্ব কোর্টের উপর। সেখানে বারবার আইনজীবী বদল, সিবিআইয়ের তদন্তে ঢিলেমি এবং সুপ্রিম কোর্ট এখন আর বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। আমার সবাই বিচারের আশায় দিন গুনছি, এটা দেশের শীর্ষ জুডিশিয়াল বডি যদি বুঝতে না পারে, তাহলে এখন আমরা কার কাছে যাব? আমরা ভয়ংকরভাবে হতাশ। এখন পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের আন্দোলনের জন্যই এতদিন তাও এই মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে শোনা হচ্ছিল। খুব অবাক লাগছে নির্ভয়ার মামলার অগ্রগতি দেখে। যে মামলার নিস্পত্তি হওয়ার আশা করা হয়েছিল ১৫ দিনে শেষ হবে এখন তা পিয়িছে গেল ৩ মাস!