মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক এলাকা পরিদর্শন ও নিহতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করলো এসডিপিআই
১৬ এপ্রিল ২০২৫, মুর্শিদাবাদ: সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ, সুতি ও ধুলিয়ান অঞ্চলে ঘটে যাওয়া দাঙ্গা এবং হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সে সমস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া-এর জাতীয় সম্পাদক তায়েদুল ইসলাম, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ডাঃ কামাল বাসিরুজ্জান এবং হাসিবুল ইসলাম। প্রতিনিধি দল সামশেরগঞ্জে দাঙ্গায় নির্মমভাবে নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং গভীর সমবেদনা জানান। তাঁরা সুতির কাশেম নগরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত ইজাজ আহমেদের পরিবারের সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
পরিদর্শন শেষে জাতীয় সম্পাদক তায়েদুল ইসলাম জানান, এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই দাঙ্গার নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। স্থানীয় থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশের নীরবতা এবং একপেশে আচরণে সুবিধা নিয়েছে বিজেপি ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীরা। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন কলকাতা থেকে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা এসে হস্তক্ষেপ করেন এবং পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
এলাকার মানুষ এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বহু অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সন্ধ্যার পর এলাকায় টহল দেওয়ার নামে বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারধর করছে, মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করছে এবং অলঙ্কার বা সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক সমাজে একেবারেই কাম্য নয় এবং এটি মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সামিল। দুঃখের বিষয়, এই সংকটময় সময়ে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাকর্মীদের তেমন কোন সক্রিয়তা চোখে পড়েনি। তাদের এই নীরবতা সাধারণ মানুষের মনে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
এসডিপিআই স্পষ্ট করে জানাতে চায়— এটি কোনও হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা নয়। ওয়াকফ আইন বাতিলের প্রতিবাদে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন হয়ে আসছে। সে মোতাবেক শামশেরগঞ্জে কিছু যুবক মিছিল করছিল। এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, সেই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বহিরাগত। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়া হয়। বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষে মদত দেয় ও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
গ্রেফতার সংক্রান্ত বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এসডিপিআই। অনেক নিরীহ যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের কোথায় রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে পরিবার বা আইনজীবীদের সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এসডিপিআই-এর পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে— সমস্ত গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অবিলম্বে আদালতে পেশ করতে হবে এবং বেআইনি হেফাজতের অবসান ঘটাতে হবে।
এসডিপিআই এই ঘটনায় একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, এবং এলাকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আলম সেখ
রাজ্য প্রেস সচিব
এসডিপিআই