বন্ধুর হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড
বন্ধুর হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড
গড়িয়াহাট থানার অফিসার-ইন-চার্জ অঞ্জন সেন ও তাঁর দল — ক্রাইম অফিসার বিশ্বজিৎ দাস, সাব-ইন্সপেক্টর অভিষেক সিং, বাবু ঘোষ এবং বিশেষ অনুসন্ধান দল — এই রহস্য উন্মোচন করেছেন, যা এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গত মার্চ মাসে, পুরনো দাস রোডের একটি পেট্রোল পাম্পের পাশে অচেতন অবস্থায় একটি পুরুষ দেহ পাওয়া যায়। পরে তাকে বিহারের বাসিন্দা বিনোদ দাস হিসেবে শনাক্ত করা হয় এবং পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দু'জন যুবক — শুভদীপ ওরফে বাবু এবং নীলাঞ্জন গোস্বামী ওরফে বাবলা — প্রথমে সাধারণ দর্শকের ভূমিকায় ছিল। ভয়ঙ্কর মোড় নেয় ঘটনাটি, যখন বাবলা শোকার্ত বন্ধুর ভান করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে। সে দাবি করে যে বিনোদ নিজে থেকেই মাটিতে পড়ে গিয়েছিল এবং তার মৃত্যুর কারণ সে কিছুই জানে না।
মে মাসে, ছেলের মৃত্যুর দুই মাস পর, বিনোদের বাবা কলকাতায় আসেন এবং নিজেই তদন্ত শুরু করেন। ঘটনাস্থলের কাছে একটি পানের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে তিনি সন্দেহ করেন যে বাবলা ও বাবুই তাঁর ছেলের হত্যার পেছনে দায়ী।
বিনোদ দাস ছিলেন কমার্স গ্র্যাজুয়েট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স কাজ করতেন। তিনি ওই গ্রুপ থেকে ১৫,০০০ টাকা ধার নিয়েছিলেন এবং এর মধ্যে ৫,০০০ টাকা already শোধ করে দিয়েছিলেন। বাকি ৯,০০০ টাকা বকেয়া ছিল — আর এই আর্থিক বিবাদই তার নির্মম হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শুভদীপ লাও ওরফে বাবু এবং নীলাঞ্জন গোস্বামী ওরফে বাবলা ছিলেন বিনোদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাবু একটি ট্রাভেল বিজনেস চালাতেন, যেখানে বিভিন্ন সরকারি অফিসে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হত। অন্যদিকে বাবলা, একজন আইটি প্রফেশনাল, এই ব্যবসায় অংশীদার এবং গ্রুপের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। অপর দুই অভিযুক্ত — জোগিন্দর ও অরবিন্দ — বাবুর অফিসের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন এবং সরকারি বিভাগে ভাড়া দেওয়া গাড়িগুলো পরিচালনা করতেন।
বিনোদের দেহে বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ধরা পড়ে ভয়ঙ্কর সত্য — চারটি ভাঙা পাঁজর এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, যা হত্যার প্রমাণ দেয়। ১৫ই মে, বিনোদের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যার মামলা নথিভুক্ত করে এবং বাবলা ও বাবুকে গ্রেফতার করে। পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জোগিন্দর ও অরবিন্দকেও আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সবাই অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
হত্যার সঠিক কারণ ও পরিস্থিতি এখনও তদন্তাধীন। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে চার অভিযুক্তকেই আজ আলিপুর কোর্টে হাজির করা হবে।