সম্প্রীতির বন্ধন নদীতে সর্বস্ব হারিয়ে মুসলিম পরিবারে বসবাস



 গঙ্গার ভাঙ্গনে হারিয়েছে বাড়িঘর। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী মোহাম্মদ সোলেমানের বাড়িতেই দিন কাটছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের নতুন শিবপুর গ্রামের মিঠুন মন্ডলের পরিবারের। হ্যাঁ এমনই এক চিত্র লক্ষ্য করা গেল শামসেরগঞ্জে। সামসেরগঞ্জের নতুন শিবপুর গ্রামের পেশায় রাজমিস্ত্রি মোহাম্মদ সোলেমান। ২০২২ এবং ২৩ সালে নতুন শিবপুর গ্রাম ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙনের কবলে পড়ে। ২০২৩ সালের শেষ লগ্নে এবং ২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যায় পেশায় টিউবেল মিস্ত্রি মিঠুন মন্ডলের বাড়িঘর। গঙ্গার গর্ভে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পর কার্যত অসহায়ত্বের জীবন শুরু হয় মিঠুন মন্ডল, তার স্ত্রী মাধুরী মন্ডল এবং সন্তান-সন্ততিদের। কোথায় যাবেন কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তারা। সে সময় কার্যত মিঠুন মন্ডল, মাধুরী মন্ডলদের নিজেদের বাড়িতেই আশ্রয় দেন গঙ্গা ভাঙন কবলিত এলাকারই বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলেমান। চারখানা ঘরের মধ্যে দুটি ঘর মিঠুন মন্ডল এবং তার পরিবারের থাকার জন্য ব্যবস্থা করেন মোহাম্মদ সোলেমান। স্ত্রী জাহানারা বিবি, এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে দুটি ঘরেই কোন রকমে বসবাস করেন মোহাম্মদ সোলেমান। একই শৌচালয় ব্যবহার, একই টিউবেল ব্যবহার। এমনকি পাশাপাশি একসাথে উনুনে রান্না করা। এভাবেই প্রায় এক বছর ধরে মোঃ সোলেমানের বাড়িতে জীবন কাটাচ্ছেন মিঠুন মন্ডলের পরিবার। বাড়িঘর হারিয়ে নিরাশ্রয় হয়ে যাওয়া মিঠুন মন্ডল এর আশ্রয়ের একমাত্র ঠিকানা হয়ে উঠেছে মোহাম্মদ সোলেমান। ঈদ হোক কিংবা পূজা একসঙ্গে আড্ডা এবং আনন্দে শামিল হন দুই পরিবার। একসঙ্গে বিড়ি বাঁধা থেকে শুরু করে উঠা বসা একই উঠানে। যদিও ২০২৫ সালে এসে এবার গঙ্গা ভাঙনের কবলে পড়তে চলেছেন মোহাম্মদ সোলেমান। কারণ গঙ্গা ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছেছে। ফলে নতুন করে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে মোঃ সোলেমানের। কোনরকমে এতদিন বন্ধু সুলেমান এর কাছে ঠাঁই হলেও তার বাড়িটাই গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসায় চিন্তিত মিঠুন মন্ডল এবং তার পরিবারও। মিঠুন মন্ডলের স্ত্রী মাধুরী মন্ডল জানাচ্ছেন, বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন অসহায় হয়ে পড়েছিলাম তখন আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নিজেদের বাড়িতেই আশ্রয় দিয়েছে মোঃ সোলেমান এবং তার স্ত্রী। এক বছর ধরে এখানেই দিব্যি সুখেই জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। যদিও এই মুহূর্তে ভাঙ্গন আতঙ্কে ঘুম বন্ধ হয়েছে আমাদের। মোহাম্মদ সোলেমানের স্ত্রী জাহানারা বিবির কথায়, ঈদ পুজো সবেতেই আমরা আনন্দে শামিল হই। কোন ভেদাভেদ নয়। মাধুরী মণ্ডলদের বিপদের সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়িতে ঠাঁয় দিয়েছি। যদিও তিনি চিন্তিত হয়ে বলেন, যেভাবে নতুন করে ভাঙ্গন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবার হয়তো আমাদের দুই পরিবারকেই ঘরছাড়া হতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url