কারবালা কবরস্থান জবর দখলের ষড়যন্ত্রে সামিল রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এবং মুর্শিদাবাদ প্রশাসন।
সংবাদ বিবৃতি
বিষয়: বহরমপুর কারবালা কবরস্থান জবর দখলের ষড়যন্ত্রে সামিল রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এবং মুর্শিদাবাদ প্রশাসন।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বহরমপুর: বহরমপুর কারবালা কবরস্থানের জমি জবর দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করেছিল সিপিআইএম পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। সেই ঘরের উপর দোতলা বিল্ডিং তৈরি করছে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ। এই বেআইনি কাজে মদত দিচ্ছে জেলা প্রশাসন, ওয়াকফ বোর্ড এবং মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। বহরমপুর কারবালা ওয়াকফ কবরস্থান মুতাওয়াল্লি কমিটির সদস্য এবং মুর্শিদাবাদ জেলা ওয়াকফ মনিটরিং সেল এর সদস্য আইনজীবী তৌফিক আহমেদ আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। কারবালা কবরস্থান এর মধ্যে অবস্থিত শিবডাঙ্গা জুমা মসজিদে কারবালা কবরস্থান মুতাওয়াল্লি কমিটির ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন মুর্শিদাবাদ প্রশাসন জনসাধারণের মাঝে অসত্য বক্তব্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যে জমি নিয়ে বিরোধ সেই জমির কোন সমাধান হয়নি। অথচ জেলা পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। প্রেস মিটে বক্তব্য রাখেন মুর্শিদাবাদ জেলা ওয়াকফ মনিটরিং সেল এর সদস্য ডাঃ এম হাসনাত আলী। তিনি বলেন জেলা পরিষদের সভায় এডিএম জেড পি ঘোষণা করেছেন কারবালা কবরস্থানের জমি সমস্যা মিটে গেছে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান বলেছেন এডিএম বলেছেন সমাধান হয়ে গেছে। অতএব সরকারি দস্তখত পড়ে গেছে। আর কিছু করার নেই।
কারবালা কবরস্থান প্রাচীন ঐতিহাসিক ওয়াকফ কবরস্থান। অবিভক্ত বাংলার অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি এখানে শায়িত আছেন। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৮২ বিঘা। বিভিন্ন সময়ে নানা রকম ভাবে জবর দখলের ফলে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৫ একর । এর মধ্যে ৫.৪০ একর জমি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ ২০০২/৩ সালে জবর দখল করে ১২৮ খানা দোকান ঘর নির্মাণ করে এবং খতিয়ান নং পরিবর্তন করে ১ নং করে।
বর্তমানে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ ঐ ১২৮ খানা দোকান ঘরের উপর দোতলা ঘর নির্মাণ করছে। মুতাওয়াল্লি কমিটি লিখিত অভিযোগ করেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের কাছে। মুতাওয়াল্লি কমিটির দাবি ওয়াকফ সম্পত্তিতে ঐ ১২৮ খানা দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের দাবি তারা জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। ওয়াকফ বোর্ড, মুতাওয়াল্লি কমিটি এবং জেলা পরিষদ যৌথ ভাবে জমি মাপ করে সমাধান করার জন্য ওয়াকফ বোর্ড নির্দেশ দেন।
গত ২৬ আগষ্ট যৌথ ভাবে জমি মাপ করা হয়। মাপ শেষে যৌথ রিপোর্ট তৈরি না করে জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা জানান যৌথ মাপ অনুযায়ী লিখিত রিপোর্ট তৈরি করে আপনাদের হাতে দিয়ে যাব। রিপোর্ট তৈরি করার সময় আপনাদের ডাকা হবে। কিন্তু সে সব না করে জেলা পরিষদের পক্ষে এডিএম জেলা পরিষদ নিজের মতো করে রিপোর্ট তৈরি করে ওয়াকফ বোর্ডে পাঠিয়ে দেন। সেই রিপোর্টের কথা জানতে বোর্ডকে চিঠি লিখলে বোর্ড গত ১৯ সেপ্টেম্বর বোর্ড অফিসে ডাকেন বিষয়টি আলোচনা করার জন্য। সেই মতো মুতাওয়াল্লি কমিটি বোর্ডের মিটিং এ যায়। মিটিং এ বোর্ডের সিইও জানান এডিএম জেলা পরিষদ এর কাছ থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাই চূড়ান্ত। একে অমান্য করতে পারব না। এডিএম জেলা পরিষদ যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে রেকর্ড অনুযায়ী ওয়াকফ এর সম্পত্তি ৫.৪০ একর। কিন্তু নক্সা অনুযায়ী সে জমির পরিমাণ ৫.২৬ একর। বাস্তবে মুতাওয়াল্লি কমিটি দখল করে আছে ৫.৭৭ একর। এডিএম রিপোর্টে লিখেছেন ঐ ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোন মসজিদ নেই। অথচ আপনারা দেখছেন মসজিদ। মসজিদ চত্বরেই আমরা প্রেস মিট করছি। কথাগুলো বললেন মুতাওয়াল্লি কমিটির সভাপতি সানোয়ার সেখ।
আমরা ঐ রিপোর্ট সরাসরি প্রত্যাখ্যান করি এবং ঘোষণা করি এডিএম জেলা পরিষদ সম্পূর্ণ ভুল রিপোর্ট দিয়েছেন। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে বোর্ডের চেয়ারম্যান আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সভা ভেঙে দেন।
ঘটনার বিশ্লেষণ বলছে জেলা পরিষদ সদস্যদের একাংশ, জেলা শাসক এবং ওয়াকফ বোর্ডের সিইও মিলিত ভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করছে। আশ্চর্যের বিষয় ওয়াকফ বোর্ডের দায়িত্ব ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করা অথচ আমরা দেখছি ওয়াকফ বোর্ডের সিইও ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে মদত দিচ্ছেন।
মুতাওয়াল্লি কমিটি দাবি করেন
১. কারবালা কবরস্থানের খতিয়ান নং ১ পরিবর্তন করে আগের খতিয়ান নং এ নিয়ে যেতে হবে।
২. ২৩৩ দাগের ৫.৪০ একর জমি পুজিয়ে দিতে হবে।
ওয়াকফ বোর্ড যদি ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার জন্য এগিয়ে না আসে তা হলে আমরা বিষয়টি মুর্শিদাবাদ জেলাবাসীকে জানাতে চাই এবং এই বিষয়ে জেলা পরিষদ, জেলা শাসক, ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এবং জেলার জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী তাও জানাতে চাই। সেই সাথে জেলা ব্যাপী গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই - বলে তাঁরা ঘোষণা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংবিধান রক্ষা ফোরাম এর সদস্য এবং আজাদ সমাজ পার্টির রাজ্য কনভেনর ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, মুসলিম লীগের রাজ্য সভাপতি আবুল হোসেন মোল্লা, বন্দী মুক্তি কমিটির জেলা সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এম আর ফিজা এবং এসডিপিআই এর জাতীয় সম্পাদক তায়েদুল ইসলাম।