বহরমপুর বইমেলায় গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা,
সাদউদ্দিন:বহরমপুর বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রিতে বাধা । রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটে।
বহরমপুর বইমেলা চলছে । শেষ হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। আজ রবিবার বলে ভিড় ভালই ছিল। প্রায় সব স্টলেই বইপ্রেমিকরা ব্যস্ত ছিলেন। কেউ বই ক্রয় করতে। কেউ উল্টে পাল্টে দেখতে। এরই ফাঁকে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কুড়ি পঁচিশ জন আরএসএস সদস্য বিশ্ব বঙ্গীয় প্রকাশনীর ব্যানার জোর করে টেনে নামিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নিয়ে যায়। খবর কানাঘুষা করতে করতে পার্শ্ববর্তী স্টলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি স্টল বাদে "লালন বিশ্ব সঙ্ঘ" স্টলে ছিলেন এসডিপিআই রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আশফাক আহমেদ এবং কলকাতা খিদিরপুর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডঃ সামসুল আলম। তাঁরা বিশ্ব বঙ্গীয় প্রকাশনীতে যান এবং স্টলের কর্মচারীদের কাছে জানতে চান কী ঘটনা ঘটেছে। কর্মচারীরা জানান" ওরা বলল, এখানে বাংলাদেশের বই বিক্রি করা যাবে না। তোমরা ব্যানারে লিখে রেখেছ এখানে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়। এটা কেন লিখেছ?এই বলে তারা ব্যানার খুলে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময়ে ওর উপর হাটে"। ইতিমধ্যেই আরও কয়েকজন জমা হন। আইনজীবী আশফাক সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন এটা বেআইনি। তায়েদুল ইসলাম বলেন কোন সমস্যা থাকলে বইমেলা কমিটিকে বলবে। কমিটি এদের বলবে। এই সব কথা বার্তার মধ্যেই আরএসএস এর বাহিনী আবার ফিরে আসে এবং নানা আপত্তিকর কথা বলতে থাকে। আইনজীবী আশফাক এবং অধ্যক্ষ সামসুল আলমের সাথে ঝগড়া বাধায়। বাংলাদেশে হিন্দুদের অত্যাচার, ভারতীয় পতাকা পোড়ানোর প্রশ্ন তোলে। কথা কাটাকাটি, তর্ক বিতর্ক চরম পর্যায়ে চলে যায়। তখন একজন পুলিশ আসেন। তিনি সকলকে থামাতে চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে আরও দু তিন জনকে ডাকেন। তারা এসেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। তখন বাধ্য হয়েই আশফাক আহমেদ এবং তায়েদুল ইসলাম থানায় জানিয়ে দ্রুত ফোর্স পাঠানোর কথা বলেন। প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে বহরমপুর থানার সেকেন্ড অফিসার অভিজিৎ ঘোষাল আসেন। সব শুনে স্টলের কর্মচারীদের আশ্বাস দেন নিশ্চিতে বই বিক্রি করেন। এর পর ওরা আসলে ছবি তুলে রাখুন। পারলে বেঁধে রাখুন। গ্ৰেফতার করব। আইনজীবী আশফাক, তায়েদুল ইসলাম এবং সামসুল আলম সেকেন্ড অফিসারের কাছে দাবি জানান স্টলগুলোতে পুলিশ দিন। এদের নিরপত্তার ব্যবস্থা করুন। অফিসার পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য সঙ্গী অফিসারকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন যদি আপনারা লিখিত অভিযোগ জানাতে চান তা হলে করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব। ততক্ষণে আরএসএস গুন্ডারা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। এই সময় তালিম প্রকাশনির এক কর্মচারী সেকেন্ড অফিসারকে জানান তাদের স্টলেও তারা গিয়েছিল। বই এলোমেলো করে দিয়েছে। বলেছে বাংলাদেশের বই বিক্রি করা যাবে না। সেকেন্ড অফিসার তাকেও আশ্বাস দেন এবং স্টলে পুলিশের ব্যবস্থা করেন। বিশ্ব বঙ্গীয় প্রকাশনীর কর্মচারী লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
মানুষ এখন আশঙ্কা করছেন, একটা জেলার বইমেলাতে যদি এই পরিস্থিতি হয় ,তাহলে তো আগামী দিনে এই ঘটনা বাড়তেই থাকবে। কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলাও কিন্তু নিরাপদ হবে না। তবে এদিন পুলিশের ভূমিকা খুব ইতিবাচক। আর শুভ চিন্তার মানুষ দারুণ ভূমিকা পালন করেন। তাদেরকে কুর্ণিশ।