আর এস এসের মুসলিম মিশন : এক ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক খেলা

 



আর এস এসের মুসলিম মিশন : এক ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক খেলা/মোহাম্মদ সাদউদ্দিন

----------------------------------------

বছর দুয়েক আগে আর এস এসের মুসলিম মিশনের বৈঠকে সংগঠনের সুপ্রীমো মোহন ভাগবত বেশ কিছু জনপ্রিয় মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন। 'ডালমে কুচ কালা হ্যায় ' তখনই লেগেছিল। আমি এনিয়ে নিয়ে দু-দুবার জনপ্রিয় দৈনিক জয়বাংলা অনলাইনে লিখেছিলাম। এতে অনেকের গোর্সা বা রাগ হয়েছিল।

এবার একেবারেই অল ইন্ডিয়া ঈমাম অর্গানাইজেশনের সর্ব ভারতীয় নেতা ড. ঈমাম উমর আহমদ ইলিয়াসি আর এস এস-সুপ্রীমো মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক করলেন। তিনি কিন্তু প্রকাশ্যেই তা মিডিয়াকে বলেছেন। কী আলোচনা হয়েছে তা সবিস্তারে বলেননি। তবে বলুন বা না বলুন,মতলব বা হাওয়াটা মোটেই ভালো নয়। তাহলে ভারতের মুসলিমরা কি দাবার ঘুটিতে পরিণত হতে চলেছে?এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। শুধু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের কথাই বা বলব কেন? এই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা মহানগরীর শ্যামবাজারে আর এস এসের রাজ্যদপ্তর কেশবভবনে পশ্চিমবঙ্গের তাবড় মুসলিম নেতাদের আনাগোনা। এক বিখ্যাত মসজিদের ঈমাম সাহেবকে তো কয়েকবার যেতে দেখা গেছে। আরেক শাহী ঈমাম নামে তো তৃণমূলের কাছে সব স্বার্থ মিটিয়ে নিয়ে তিনি তো এখন তলে তলে ঐ সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে কলেজ স্ট্রিটের মহম্মদ আলী পার্কের কাছে একজনকে জিজ্ঞাসা করছি , শাহী ঈমাম এখন কী করছেন? ঐ ভদ্রলোক বললেন, তিনি এক ফুলের সব খেয়ে এখন আরেক ফুলের মধু খাচ্ছেন। অর্থাৎ তৃণমূলের কাছে স্বার্থ মিটিয়ে এখন আর এস এস-বিজেপির দিকে ভিড়ে গেছেন্ হায়রে ঈমামের ঈমান! কলেজস্ট্রিটের সেই ভদ্রলোক একথাও বললেন‌ যে, এই তথাকথিত মিল্লাতিরাই আমাদের সমাজের জালি মসীহা। এইরকম অনেক রয়েছে। আর এস এসের পোষা কুকুরে পরিণত হয়ে গেছেন বেশ কিছু সর্বভারতীয় মুসলিম নেতা। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়।

আর এস এসের জন্ম ১৯২৫ সালে লখনউ শহরে। তার রাজনৈতিক শাখা প্রথমে জনসঙ্ঘ । তারপর ১৯৮০ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। তার আগে এর রাজনৈতিক শাখা ছিল হিন্দু মহাসভা। এই আর এস এসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের, যাদের কথা শুনে ১৯৭৭ সালে মোরারাজি দেশাই-এর জনতা সরকারের আমলে তৎকালীন জনসঙ্ঘের অটলবিহারী বাজপেয়ীকে বিদেশমন্ত্রী করা হয়েছিল। ১৯৭৭-৮০ সালের মধ্যেই জনতা তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। নব্বইয়ের দশকে যে অস্তিত্ব ছিল বাবরি ধ্বংসের পরে এই জনতা দারুণভাবে খণ্ড-বিখণ্ডে পরিণত হয়ে গেল। জনতা দল বলা চলে একরকম অস্তিত্বহীন।

আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের ভোট বিশেষ করে হিন্দু বামেদের ভোট চলে গেল বিজেপির দিকে। বামভোট রামে চলে যাওয়ায় আজকের সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট পরগাছায় পরিণত। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে তৃণমূল-সুপ্রীমো মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন , বিজেপিকে সাথে নিয়েই বামফ্রন্টেকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করব। আজ পশ্চিমবঙ্গে সেক্যুলার শক্তিগুলো হত্যা করে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলেই আজ সেই দলটাই মমতার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। কেবল আর এস এস দুটো দলকেই নিয়ন্ত্রণ করছে বলে একজন শাসক তো, আরেকজন বিরোধী। কেন না আর এস এসের মূল শত্রু হল ধর্মীয়ভাবে মুসলিম ও খ্রিস্টান। অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাবে কমিউনিস্ট তথা বামপন্হীরা। আর এস এস মনে করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নিজের শক্তিতে ক্ষমতায় আসলে আসুক। নইলে তৃণমূল থেকে যাক।যেন বামপন্হীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাহলে হিন্দুত্ববাদীদের দুর্মুস করে দেবে তারা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে গেলে মুসলিমদের ৩০ শতাংশ(অলিখিত ৩৫ শতাংশ) ভোট জরুরি। তাই আর এস এস এস মুসলিম মিশন করে কলাকৌশল করে মুসলিমদের টানতে চাইছে । শতবর্ষে পদার্পণকারী আর এস এস নমনীয় মনোভাব নিয়ে মুসলিমদের ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে তারা এই পশ্চিমবঙ্গকে আরেকটি 'কাশ্মীর' বানাতে চাইছে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের কখনো অনুপ্রবেশকারী , অথবা এন আর সি বা এস ‌ আই আর প্রয়োগ করে নাগরিকহীন বা ভোটারহীন করতে চাইছে । কিংবা বাংলাদেশে পুস-ইন করতে চাইছে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী তকমা দিয়ে। তাই আর এস এসের মুসলিম মিশন এক জঘন্য ষড়যন্ত্র । এক ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক খেলা।

ইতিহাস ইতিহাসের নিয়মে চলে। আমরা কি স্মরণ করতে পারি না, ব্রিটিশ ভারত অবিভক্ত বাংলায় কৃষক -প্রজাপার্টির শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক হিন্দু মহাসভার (পরে জন সঙ্ঘ, আরও পরে বিজেপি) শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা গড়ে কীভাবে হক সাহেব রাজনেতিকভাবে নিজের অস্তিত্বকে নষ্ট করেছেন? কংগ্রেসের মধ্যে ঢুকে স্বাধীন ভারতে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি কীভাবে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে খুন করেছে আর এস এসের নাথুরাম গডসে? জহরলাল নেহেরু ১৯৫২ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার পরও তার সঙ্গ ত্যাগ করেন। কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল আর এস এসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও পরে নিজের দল কংগ্রেসকে বলেছিলেন , আর এস এসের কাছ থেকে দূরে থাকতে। কেন না , আর এস এস ছুঁচ হয়ে ঢুকে আর ফাল হয়ে বের হয়।

লেখক কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url