ধৈর্য্য দুর্বলতা নয় ( প্রসঙ্গ বাংলাদেশ)




আশঙ্কা ক্রমশ সত্যি হতে চলেছে। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দাজ করা হয়েছিল এবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে পদ্মাপারের। এবার সেটাই হতে শুরু করেছে। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশ থেকে তদারকি সরকারের একাধিক মন্ত্রী পালা করে ভারতের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে। বাংলা, বিহার, ওড়িশা দখল করে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় কর্মচারীদের দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।


দু'দেশ থেকেই হুমকি এবং পাল্টা হুমকি দেওয়া হচ্ছে একটা বিশেষ স্তর থেকে। যেমন কলকাতা এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পাল্টা হিসাবে ঢাকায়য় ভারতীয় হাইকমিশন অফিস অভিযানের ডাক দেয় বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী ছাত্র সংগঠন। আবার কলকাতার একাধিক জায়গায় ঢাকাই শাড়ি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাল্টা হিসাবে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের মন্ত্রী তথা বিএনপি যুগ্ম সচিব রেজভি আরও একধাপ এগিয়ে দাবি করেছেন নবাব সিরাজদ্দৌলার আমলের বাংলা, বিহার এবং ওড়িশা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।


এ দিকে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক টি রাজা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে অনুরোধ করেছেন মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইলেন। বললেন, ১৫ মিনিটের জন্য সীমান্ত খুলে দিলে বাংলাদেশের খেলা শেষ করে দেওয়া যাবে। আর তার জন্য 'বজরঙ্গী'রা তৈরি আছেন। আবার বাংলায় বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বাংলাদেশে যাবতীয় রফতানি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর পাল্টা হিসাবে দেখা গেল, এতদিন ভারত থেকে আলু-পেঁয়াজ আমদানি করতো বাংলাদেশ। সম্প্রতি জার্মানি, স্পেন, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে সেগুলি আমদানি করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে ঢাকা। এইভাবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতী হচ্ছে।


কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশ থেকে ক্রমাগত হুমকি আসার পরও ধৈর্য্য দেখাচ্ছে ভারত। সোমবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী ঢাকায় গিয়েছেন। তিনি প্রায় আড়াই ঘন্টা বৈঠক করেছেন বিদেশ সচিব পর্যায়ে। সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে। আর ইউনুসকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত কি-রকম সম্পর্ক আশা করে। অতীতে ভারতের সঙ্গে যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এই মেঘ কাটিয়ে তা আবার ফিরেয়ে আনতে চায় নয়াদিল্লি। ভারতের বিদেশ সচিব আরও বলেছেন, দু'দেশের মানুষের সম্পর্ক এবং স্বার্থের কথা ভেবে এটা চায় দিল্লি।


কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেল, ভারতের বিদেশ সচিব যখন ঢাকায় বসে এমন সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিচ্ছেন তখন বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঢাকায় কিংবা প্রতিবেশী অন্য কোনও দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন খোদ অন্তর্বর্তী

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মহম্মদ ইউনুস। তাহলে কি ভারতের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির জন্য আগ বাড়িয়ে হাত বাড়ানোকে দুর্বলতা মনে করছে ঢাকা? যদি তা করে থাকে তাহলে ভুল করবে। ঢাকার মনে করা উচিত ভারতের শক্তি, অর্থবল এবং লোকবল সম্পর্কে। ভারত আত্মনির্ভর। ঢাকার মনে করা উচিত 'এটা ধৈর্য্য দেখাচ্ছে ভারত। আর ধৈর্য্য দেখানোকে দুর্বলতা ভাবা মুর্খামি। ভারতের সঙ্গে বৈরিতায় না গিয়ে যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে এতে আখেরে লাভ বাংলাদেশেরই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url