প্রতারণার থাবা মার্কিন মুলুকে, সোনারপুরে গ্রেফতার তিন জালিয়াত
প্রতারণার থাবা মার্কিন মুলুকে, সোনারপুরে গ্রেফতার তিন জালিয়াত
প্রতারণার টাকায় ৫০ লক্ষের গাড়ি, আড়াই কোটির দুটি ফ্ল্যাট। গত দু’বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার লেনদেন। সবই সোনারপুরের কল সেন্টারে বসে। কীভাবে সম্ভব?
ধরুন নিজের বাড়িতে কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন আপনি, কাজ করছেন নিশ্চিন্ত মনে। আচমকাই স্ক্রিনে ভেসে উঠল কিছুটা এই ধরনের সতর্কবার্তা: “আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার হচ্ছে। মাইক্রোসফট-এর তরফে আমরা জানতে পেরেছি, বিভিন্ন অনৈতিক ওয়েবসাইট দেখা হয়েছে এই কম্পিউটারে, যার ফলে খুব শিগগিরি আপনার সিস্টেম ‘ক্র্যাশ’ করতে চলেছে, আপনি হারাতে চলেছেন আপনার মূল্যবান ডেটা।”
প্রযুক্তিবিদ্যায় হাতেখড়ি না হয়ে থাকলে এই ধরনের হুঁশিয়ারি দেখে ঘাবড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অতঃপর কী করা? স্ক্রিনে দেওয়া ফোন নম্বরে ফোন করা, আর কী। ফোনের অপর প্রান্তে কারা? না, মাইক্রোসফট-এর ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ’, যারা অবিলম্বে দখল নিয়ে নেবে আপনার কম্পিউটারের, এবং ম্যাজিকের মতো সতর্কবার্তা হাওয়া করে দিয়ে বলবে, এক বছরের জন্য ২০০ মার্কিন ডলার (ভারতীয় টাকায় ১৭ হাজারের কিছু বেশি) অথবা তিন বছরের জন্য ৪০০ ডলার দিলেই সমস্যা ভ্যানিশ!
বুঝতেই পারছেন, এই ‘প্যাকেজ’ শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিকদের জন্যই। রীতিমত মার্কিনি ঢঙে ইংরেজি বলা সেই ‘সাপোর্ট স্টাফ’-এর কথায় অজস্র নিরপরাধ মার্কিন নাগরিক টাকা জমা করে দিতেন কোনও মার্কিন ব্যাঙ্কে। সেখান থেকে টাকা পরিবর্তিত হয়ে যেত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে, এবং ভারতে ঢুকত চিন হয়ে। কলকাতা এবং দিল্লিতে সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ফের হয়ে যেত টাকা, যা অবশেষে চলে যেত প্রতারকদের হাতে।
প্রতারণার এই একমাত্র উপায় নয়। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (আমাদের গৃহমন্ত্রকের সমতুল্য)-র সীলমোহর যুক্ত ভুয়ো নথিপত্র ব্যবহার করে চলত ভয় দেখানো – “আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কোনও অজানা উদ্দেশ্যে রাশিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, সেহেতু আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত চালু করা হলো।” দীর্ঘ কারাবাস এড়াতে আপনি কী করবেন? মোটা অঙ্কের টাকা জমা করবেন, আবার কী। বলা বাহুল্য, সেই টাকা উপরোক্ত উপায়ে এসে পৌঁছবে ভারতে।
ফুলেফেঁপে উঠেছিল এই ব্যবসা, কিন্তু বাদ সাধল আমাদের সূত্রের খবর। বারুইপুর পুলিশ জেলার সোনারপুর থানা এলাকায় একটি বহুতল বাড়িতে চলছে বেআইনি কল সেন্টার, গত ৩১ জানুয়ারি এই খবর পান পশ্চিমবঙ্গ সাইবার অপরাধ বিভাগের ডিআইজি অঞ্জলি সিং, আইপিএস।
সেদিনই দুপুরে অঞ্জলির নির্দেশে বারুইপুর সাইবার থানার সঙ্গে যৌথ অভিযান চালানো হয় ওই কল সেন্টারে, যার ফলে গ্রেফতার হয় এই মামলায় এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত জয় হালদার (২৫), সঙ্গে তন্ময় মণ্ডল (২৫) ও শুভজিৎ বিশ্বাস (২৯)। বাজেয়াপ্ত হয়েছে পাঁচটি করে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন, দুটি রাউটার, সাতটি হেডফোন সমেত অজস্র জাল নথিপত্র। চিহ্নিত করা হয়েছে বেশ কিছু সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। জয় হালদারের কাছ থেকে আরও বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের একটি বিদেশি গাড়ি, চিহ্নিত করা হয়েছে তার দুটি ফ্ল্যাট, মাথাপিছু দাম প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
তদন্ত চলছে। আশা করছি, এই কাজে অভিযুক্তদের সহায়কদের দ্রুত চিহ্নিত করব আমরা।
baruipur District Police